আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এসপিকে এক সভায় গর্ববোধ আরেক সভায় শামীম ওসমানের হুঙ্কার

সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান গত ২ মার্চ নারায়ণগঞ্জ ২নং রেলগেইট এলাকায় মাদক, সন্ত্রাস, ভূমিদস্যু ও ইভটিজিং বিরোধী একটি সমাবেশ করেন। উক্ত সমাবেশে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ও জেলা পুলিশের প্রশংসা করেন।

শামীম ওসমান পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের প্রশংসা করে বলেন, আমরা গর্বিত তাঁর মতো পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জে পেয়ে। শামীম ওসমান আরো বলেছিলেন পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পর বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পদক বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল) পেয়েছেন এতে আমি এবং নারায়ণগঞ্জবাসী গর্বিত।

গত ২ মার্চের জনসভার পর একটু একটু করে পরিবর্তন হতে থাকে নারায়ণগঞ্জের প্রেক্ষাপট। চলমান কিছু ঘটনায় উত্তপ্ত নারায়ণগগঞ্জ, উত্তপ্ত নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি। কখনো মাদক, কখনো সন্ত্রাস আবার কখনো হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রশাসন বনাম রাজনীতি, দক্ষিন মেরু বনাম উত্তর মেরু সংঘাত হাতছানি দিচ্ছে ।

এমন আতংকে যখন নগরবাসির রাতের ঘুম হারাম ঠিক তখনি নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নিয়ে কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল ও ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সাবেক সভাপতি তানভীর আহম্মেদ টিটুর প্রসঙ্গ নিয়ে নারায়নগঞ্জ পুলিশ প্রশাসনকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম সহ সমগ্র নারায়ণগঞ্জকে অচল করার হুমকি প্রদান করে। পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ জলকামান, সাজোয়াযান নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহর টহল দেন। এ দেখে নগরবাসির মধ্যে স্বস্তি পায়।

গত শনিবার (৬ এপ্রিল) জরুরী কর্মী সভার আহ্বান করেন শামীম ওসমান । কর্মীসভায় দলে দলে নেতাকর্মীরা উক্ত জরুরী কর্মসভায় পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদকে কটুক্তি করে তার বদলীর শ্লোগান দিয়ে যোগদান করে।

উক্ত কর্মীসভায় সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন ‘এটা গাজীপুর না নারায়ণগঞ্জ, ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে টের পাবেন, এই সময়ের মধ্যে কী হতে পারে! প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জের সব খবর রাখেন।’ সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা তিনি দেননি। তাই অনেকের মধ্যেই এ নিয়ে ব্যাপক কৌতুহল জন্ম নিয়েছে।

সাংসদের এমন বক্তব্যের পর থেকেই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই ১০-১২ দিন। কোন উদ্দেশ্যে তিনি এমন সময় নির্ধারণ করলেন!

অপরদিকে নগরবাসী বলছে, যে পরিস্থিতি গত কদিন ধরে চলছিলো তা কিছুটা হলেও আতঙ্কের ছিলো। সেখান থেকে বের হয়ে আসাটাই শ্রেয়। তবে, এসপির চলমান যেসব অভিযান তা অব্যবহত রাখার জন্য দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। একই সাথে তারা বলছেন, এমন অভিযান যেন এক কেন্দ্রীক না হয়। অপরাধিকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে হবে। নগরবাসীর মতে নারায়ণগঞ্জের সাংসদরা এমন অনেক হুমকি দিয়ে থাকেন। তবে তাঁদের সেই হুমকি স্টেজেই সীমাবদ্ধ।

তারা তখনই হুঙ্কার দেন যখন তাঁদের স্বার্থে আঘাত লাগে। নগরবাসী আরো বলেন, গত ২মার্চ একটি জনসভায় শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের পুলিশ ও পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের ব্যাপক প্রশংসা করেন। অপর আরেকটি সভায় তিনি আকার ইঙ্গিতে পুলিম সুপার হারুন অর রশিদকে ১২-১২ দিনের আল্টিমেটাম দেন। এতেই বোঝা যায় এই সংসদ সদস্যের মানসিক অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে।

সচেতন মহল বলছেন, এসপি এসেই জানান দিয়েছিলেন তিনি মাদক, সন্ত্রাস, ভূমিদস্যু ও চাঁদাবাজি বন্ধ করবেন। তিনি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করবেন। এ কদিন তিনি তেমন কাজই দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এখন যদি ভয় বা অন্য কোনো কারণে সেখান থেকে সরে আসেন তাহলে সাধারণ মানুষ তার উপর যে আস্থা এনেছিলেন তা তিনি নিজেই হারাবেন। কেননা, সাধারণ মানুষ সন্ত্রাস, চঁদাবাজ, মাদকমুক্ত সমাজ চান।

তবে, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার যে লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছেন সে লক্ষ্যে যদি তিনি স্থির থাকতে পারেন তাহলে জিতটা তারই হবে। আবার এখানে যদি সাংসদ শামীম ওসমান যে হুঙ্কার ছেড়েছেন তা যদি তিনি প্রতিফলন ঘটাতে পারেন তাহলে জিতটা তারই হবে। তাই এখন দেখার বিষয় এখানে কে জিতেন। কথায় আছে, জো জিতা ওহি সিকান্দার। কে সিকান্দার হন, নগরবাসী এখন সেটিই দেখার অপেক্ষায়।

তবে, শেষমেশ সিকান্দারের ভূমিকায় হয়তো সাংসদ সেলিম ওসমানই হতে পারেন। কেননা, তিনি নিজেই সোমবার যাচ্ছেন এসপির সাথে কথা বলতে। তবে নারায়ণগঞ্জ সর্বকালের সেরা এসপি হারুন অর রশীদ কে বললে ভুল হবে না। কারণ অতীতের কোন এসপি হারুন অর রশীদের মতো মাদক সন্ত্রাস দমন করতে পারে নাই।